উৎপল দাস , পূর্বপশ্চিম : আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের বর্তমান সংসদের প্রায় ৭০ জন সদস্য মনোনয়ন লাভে ব্যর্থ হতে পারেন। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে যে মাঠ জরিপ শুরু করেছেন, সেখানে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে হেভিওয়েট প্রার্থীসহ ৭০ জনের নামে নানা অভিযোগ উঠে আসছে।
এতে বলা হচ্ছে- নানা কারণে এলাকায় আলোচিত-সমালোচিত এইসব মন্ত্রী-এমপিদের মনোনয়ন দেয়া হলে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া কষ্টসাধ্য হবে। এই ৭০ জন মন্ত্রী-এমপিকে ঝুঁকিপূর্ণ প্রার্থী হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের কারো বিরুদ্ধে এলাকায় জনপ্রিয়তা হ্রাস, জনবিচ্ছন্ন হয়ে পড়া, অনেকের বিরুদ্ধে দখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদকব্যবসা, অনৈতিকভাবে বিত্ত-বৈভব গড়ার মতো অভিযোগ আনা হয়েছে। কারো বিরুদ্ধে আনা হয়েছে- সন্ত্রাস ও দলীয় কোন্দল সৃষ্টির অভিযোগ।
বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার বাইরেও দেশি-বিদেশি সংস্থার দ্বারা মন্ত্রী-এমপিসহ প্রার্থীদের আমলনামা তুলে আনা হচ্ছে। সংসদের ৩০০ আসনে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি এমনকি সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনী এলাকা ভিত্তিক অবস্থানও ওঠে এসেছে। অনেক জায়গায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকের ব্যাপারে ইতিবাচক রিপোর্ট যেমন আসছে, অনেকের বিরুদ্ধে আবার নেতিবাচক তথ্যাবলী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এমনকি আওয়ামী লীগের বাইরে বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী যাদের অবস্থান শক্তিশালী তাদের চিত্রও তুলে আনা হচ্ছে।
সরকার ও আওয়ামী লীগের মন্ত্রী নেতারা যতই বলছেন, ২০১৯ সালের আগে কোন নির্বাচন নয়; তবুও পর্যবেক্ষক মহল আগামী বছরের শেষে আগাম নির্বাচনের আভাস পাচ্ছেন। এবার ঈদের আগে প্রধানমন্ত্রী দলের এমপিদের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার তাগিদ দেন। এলাকায় ঈদের সময় ব্যাপক জনসংযোগ ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তদরকিরও পরামর্শ দেয়া হয়। শেখ হাসিনার নির্দেশে দলের মন্ত্রী-এমপিরা তাদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়িয়েছেন।
রাষ্ট্রীয় অন্যতম একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ফরিদপুর-২, সাবেক শ্রমমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর নরসিংদী-৫, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির চাঁদপুর-২, পূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের চট্টগ্রাম-১, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাড. সাহারা খাতুনের ঢাকা-১৮, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আফম রুহুল হকের সাতক্ষীরা-২ আসনগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে জনপ্রিয়তায় ধ্বস নেমেছে এসব হেভিওয়েট আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের।
এছাড়া সাবেক প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে তালিকায় – গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী মান্নান খান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরীর অবস্থাও নড়বড়ে বলে প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ধর্ম মন্ত্রী এবং ময়মনসিংহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের নামে এলাকায় সরকারি জমি দখল করে নিজের নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়াসহ নানা অভিযোগ ওঠায় স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। এছাড়া নিজের বেপোরোয়া ছেলের কর্মকান্ডে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
টেকনাফ থেকে নির্বাচিত এমপি আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ। সরকারি কর্মকর্তাকে মারধর, শিক্ষককে প্রহারসহ বিভিন্ন অভিযোগে তার ইমেজ স্থানীয় জনগণের পাশাপাশি দলের কাছেও ভালো নয়। রিপোর্টেও বদির অবৈধ ব্যবসায়িক তৎপরতার বিষয়ে অভিযোগ এসেছে।
সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের বিরুদ্ধে দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রে। সেখানে জলমহাল দখলের সঙ্গে তার লোকজনের জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয়েছে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখা এবং অহেতুক প্রভাব খাটানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
আড়িয়াল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণ, চাঁদাবাজি, জমিদখলের মতো অপকর্মের কারণে কপাল পুড়তে পারে মুন্সিগঞ্জ-১ এমপি সুকুমার রঞ্জন ঘোষের। শুরুর দিকে এলাকায় নিজের অবস্থান ভালো থাকলেও পরবর্তীতে নানা অপকর্মের কারণে তিনি অনেকটাই বেকায়দায় আছেন। এই আসনে দলের সাফল্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন খোদ দলের নেতারাই।
গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি, গাইবান্ধা-৪ আবুল কালাম আজাদ এবং গাইবান্ধা-৫ আসনের অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার বিপক্ষে অভিযোগের পাহাড়।
এছাড়া চট্টগ্রাম-৩-মাহফুজুর রহমান, চট্টগ্রাম-১১-এর এম আব্দুল লতিফ, ঢাকা-১৬ আসনের ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা, চুয়াডাঙ্গা-১-এর সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, যশোর-১-এর শেখ আফিল উদ্দিন, বরিশাল-২-এর তালুকদার মো. ইউনুস, নেত্রকোনা-২-এর আরিফ খান জয় (উপমন্ত্রী), মানিকগঞ্জ-৩-এর জাহেদ মালেক স্বপন, নওগাঁ-৬-এর ইসরাফিল আলম, রাজশাহী-১-এর ওমর ফারুক চৌধুরী, মেহেরপুর-১-ফরহাদ হোসেন, যশোর-৫-এর স্বপন ভট্টাচার্য্য, যশোর-৬-এর ইসমাত আরা সাদেক, খুলনা-২-এর মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, ঢাকা-১৫-এর কামাল আহমেদ মজুমদারসহ ৭০ জনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
পাঠকের মতামত: